Investment Strategy : Part-06 - Smart Stock

Share Market, Analysis, Learning, Tools, News, All in one place.

Monday, September 17, 2018

Investment Strategy : Part-06


The Magic of Value Investment

ম্যাজিক ফর্মুলা: জোয়েল গ্রিনব্লাট


যেকোনো বিনিয়োগেই সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে থাকেন তারা, যারা সস্তায় কিনে রেখেছিলেন। সেকেন্ডারি বাজারের অবস্থা বোঝার জন্য কেউই যখন টিভি ছেড়ে উঠছেন না, তখন তাদের কেউ হয়তো অসময়ে ঘুুমাচ্ছেন, কেউ হয়তো প্রিয়জনদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেউবা হয়তো স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছেন। কারণ এ সপ্তাহে সূচক ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেলেও তারা মুনাফায় থাকবেন। ভ্যালু ইনভেস্টিংয়ের সবচেয়ে বড় মজাটা সম্ভবত এখানেই।

উত্থান-পতনের চক্রাকার খেলায় বাজার আমাদের সবাইকে বহুবার সস্তায় শেয়ার কেনার সুযোগ দেয়। এখন প্রশ্ন হলো, সস্তায় কোন শেয়ার কিনব আর কোন শেয়ার এড়িয়ে চলব। ভ্যালু ইনভেস্টমেন্টের গুরুরা অনেক আগেই এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। মূল উত্তরটি চিরকাল একই থাকবে— যে কোম্পানির ব্যবসা ভালো এবং ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল, সস্তায় পেলে এর শেয়ার কিনতে দ্বিধা করা যাবে না। সময়ের পরিক্রমায়, ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতায় সেসব কোম্পানি শনাক্তকরণের কৌশলে হয়তো কিছু পরিবর্তন আসে। নিজের পোর্টফোলিওতে সফল প্রয়োগের পর বই লিখে এসব কৌশল সবার সঙ্গে শেয়ার করেছেন সময়ের চ্যাম্পিয়নরা। হেজ ফান্ড অপারেটর গথাম ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা জোয়েল গ্রিনব্লাট তাদেরই একজন। ১৯৮৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ওয়াল স্ট্রিটে বছরে গড়ে ৪০ শতাংশ রিটার্ন নিশ্চিত করে ভ্যালু ইনভেস্টমেন্টের একজন গুরু হিসেবে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো, মাত্র দুটি সহজ সূত্র ব্যবহার করে তিনি শেয়ার বাছাই করেন, ওয়াল স্ট্রিট যেগুলোকে ‘ম্যাজিক ফর্মুলা’ নামে চেনে। কম্পিউটারাইজড ডাটাবেজে ম্যাজিক ফর্মুলার আক্ষরিক প্রয়োগও লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। প্রি-প্রোগ্রামড ট্রেডিংয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান এ কৌশল ব্যবহার করে সাফল্য দেখিয়েছে। এ পর্বের প্রচ্ছদ কাহিনী গ্রিনব্লাটের ম্যাজিক ফর্মুলা নিয়ে...

১৯৮০ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুল থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন নিউইয়র্কার জোয়েল গ্রিনব্লাট। ইনভেস্টমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করে যাচ্ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি নিজের হেজ ফান্ড চালু করেন। ৭ মিলিয়ন ডলারের গথাম ক্যাপিটাল ফান্ডের প্রারম্ভিক পুঁজির সিংহভাগই দিয়েছিলেন জাংক বন্ড কিং মিশেল মিলকেন। হিসাব টেনে দেখা যায়, ১৯৮৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ফান্ডটি গড়ে প্রতি বছর ৪০ শতাংশ রিটার্ন এনে দেয়। পারফরম্যান্সের কারণেই তারকা বিনিয়োগকারী হয়ে যান ভদ্রলোক। মধ্যবর্তী সময়েই লেখালেখি শুরু করেন। অন্তত এক ডজন বইয়ের প্রচ্ছদে তার নাম দেখা যায়। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্কুল অব বিজনেসে লেকচারও দেন।

শুরুটা ছাত্রজীবনেই
বিভিন্ন সাক্ষাত্কারে জোয়েল নিজেই জানিয়েছেন, শুরু থেকেই ভ্যালু ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী কাজে বেশ সিরিয়াস ছিলেন তিনি। হোয়ার্টনে পড়ার সময়ই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এসঅ্যান্ডপিভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি সেকেন্ডারি ডাটাবেজ গড়ে তোলেন তিনি, যাতে শেয়ারদর ও মৌলভিত্তির উপাত্ত ছিল। পরীক্ষামূলকভাবে সেখানে বেঞ্জামিন গ্রাহামের নেট-নেট ফর্মুলা প্রয়োগ করে তিনি দেখেন, সস্তায় শেয়ার কিনলে দীর্ঘমেয়াদে ভালো মুনাফা হয়। ভ্যালু ইনভেস্টমেন্টের জনক বেঞ্জামিন গ্রাহামের সূত্রটি ছিল, লিকুইডেশন ভ্যালু বা অবসায়নকালীন মূল্যের চেয়ে কমে পেলে একটি শেয়ার কিনে সেটি ধরে রাখা। প্রায় শূন্য ঝুঁকির এসব শেয়ার একসময় ভালো মুনাফা দেয়।

লিকুইডেশন ভ্যালু = সম্পদসমুদয় দায়
আরো পর্যবেক্ষণের পর জোয়েলরা দেখলেন, গ্রুপ হিসেবে এ শেয়ারগুলো মুনাফা দিলেও গ্রাহামের সূত্র থেকে পাওয়া সব সস্তা শেয়ার সেকেন্ডারি বাজারে ভালো করেনি। তখন জোয়েল সিদ্ধান্ত নিলেন, সস্তায় পেলেই সব শেয়ার কেনা যাবে না। বরং ভালো কোম্পানির শেয়ার খুঁজে বের করতে হবে। তিনি হিসাব মিলিয়ে দেখলেন, বাজারের দুর্দিনে ভালো-মন্দ সব শেয়ারের দামই কমে যায়। এর মধ্যে বেছে বেছে ভালো শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করাই চ্যালেঞ্জ। এ পর্যায়ে তিনি ওয়ারেন বাফেটের তত্ত্বে বেশ প্রভাবিত হলেন। গ্রাহাম যেখানে সবচেয়ে সস্তায় শেয়ার কেনাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন, বাফেট সেখানে শুধু ভালো কোম্পানিগুলোকেই পোর্টফোলিওতে চান।

ঐতিহাসিক উপাত্তের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গ্রিনব্লাট সিদ্ধান্ত নেন, দুই গুরুর শিক্ষার সমন্বয় ঘটাবেন। অর্থাত্ ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম যখন কমে যাবে, তখন সেটি শনাক্ত করতে হবে। ভালো কোম্পানি বাছাইয়ের জন্য তুলনামূলক জনপ্রিয় নির্দেশকগুলোর বদলে তিনি সূত্র হিসেবে নেন রিটার্ন অন ক্যাপিটালকে (আরওসি)। অর্থাত্ একটি কোম্পানি তার মূলধনের বিপরীতে যথেষ্ট আয় করতে পারলে এটিই ভালো কোম্পানি। মোটা দাগের আর্থিক নির্দেশকগুলোর বদলে তিনি প্রতি ক্ষেত্রেই আরো সুনির্দিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করেন। সুদ ও কর হিসাব করার আগ পর্যন্ত পরিচালন মুনাফাকে কোম্পানির নিট চলতি মূলধন ও স্থায়ী সম্পদের যোগফল দিয়ে ভাগ করলেই জোয়েলের আরওসি পাওয়া যায়।

রিটার্ন অন ক্যাপিটাল = সুদ করপূর্ব পরিচালন মুনাফা/নিট চলতি মূলধন + নিট স্থায়ী সম্পদ
এ একটি সূত্রই ভালো কোম্পানি খোঁজার চেষ্টায় তাকে ৯০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে সঠিক প্রমাণ করেছে।
এদিকে ভালো কোম্পানিটির শেয়ার এখন অতিমূল্যায়িত না অবমূল্যায়িত, তা বের করার জন্য সূত্র হিসেবে গ্রিনব্লাট বেছে নেন আর্নিংস ইল্ডকে। যৌক্তিক কারণে এ কৌশলটিও ওয়াল স্ট্রিটে টানা দুই যুগ ধরে নিজের আবেদন ধরে রাখে। এখনো হয়তো তাই।

আর্নিংস ইল্ড = সুদ করপূর্ব পরিচালন মুনাফা/এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু
এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু = কোম্পানির বাজার মূলধন (সব সাধারণ প্রেফারেন্স শেয়ারের মোট বাজারমূল্য) + কোম্পানির মোট ঋণের বর্তমান মূল্য + মাইনরিটি ইন্টারেস্টনগদ কোম্পানির নিট বিনিয়োগ

লক্ষ্য করুন, অবমূল্যায়িত কোম্পানি খোঁজার সময় মূল্য আয় (পিই) বা প্রাইস টু বুক ভ্যালু (পিবি) রেশিওর মতো নির্দেশকগুলোকে বাদ দিয়ে তিনি আরো সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানে চলে গেলেন। মূল ব্যবসাটি কেমন করছে— একটি কোম্পানির নিট মুনাফার উপাত্ত থেকে তা সবসময় বোঝা যায় না। এজন্য তিনি পরিচালন মুনাফার ওপর বেশি গুরুত্ব দিলেন। এন্টারপ্রাইজ ভ্যালুকে আমলে নেয়ার অর্থ হলো, একটি কোম্পানি অধিগ্রহণে বিনিয়োগকারী যে খরচ করতে প্রস্তুত— জোয়েল গ্রিনব্লাট তার নিরিখেই হিসাব করে দেখছেন, বর্তমান বাজারদরে কোম্পানিটি অতিমূল্যায়িত না অবমূল্যায়িত।

অটোমেটেড সিস্টেমে এ দুটি সূত্র বসিয়ে সার্চ করার পর উভয় ক্ষেত্রেই বহু কোম্পানির একটি তালিকা চলে আসে। একটিতে ভালো কোম্পানির মেরিট লিস্ট, অন্যটিতে মূল ব্যবসায় ভালো করছে এমন সস্তা কোম্পানির অগ্রাধিকার তালিকা।

ভালো সস্তার র‍্যাংকিং
পরের ধাপে দুই তালিকার মধ্যে সমন্বয় করে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি বাছাইয়ের পালা। এজন্য গ্রিনব্লাট তার টু ফ্যাক্টর কম্পিউটার প্রোগ্রাম সেট করলেন। উচ্চ আরওসি ও আর্নিং ইল্ডের সমন্বয়ে জন্ম নিল ম্যাজিক ফর্মুলা।
উদাহরণ হিসেবে গ্রিনব্লাট দেখিয়েছিলেন, ধরুন একটি প্রতিষ্ঠান সে সময়ে ডাটাবেজভুক্ত সাড়ে তিন হাজার কোম্পানির মধ্যে আরওসি চ্যাম্পিয়ন তালিকায় ১০ নম্বরে আছে, আর আর্নিংস ইল্ড তালিকায় ২০ নম্বরে আছে। এ কোম্পানির ম্যাজিক ফর্মুলা র্যাংকিং দাঁড়ায় ১০+২০ = ৩০।
এরপর তিনি শুধু ১ থেকে ৩০ র্যাংকিংয়ের কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।

বিনিয়োগের মেয়াদ
গ্রিনব্লাট এ ৩০টি কোম্পানির শেয়ার এক বছরের জন্য ধরে রাখেন। বছর শেষে নতুন তালিকা আসে। সেকেন্ডারি বাজারে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানিগুলোকে বছর শেষ হওয়ার আগেই পোর্টফোলিও থেকে সরিয়ে ফেলা আর মুনাফা দেয়া শেয়ারগুলোকে বর্ষপূর্তি পর্যন্ত ধরে রাখার নীতি তিনি আক্ষরিক অর্থেই পরিপালন করছিলেন। নতুন বছরে নতুন তালিকায় তার পুরনো তালিকার কিছু কোম্পানিও হয়তো জায়গা করে নেয়। নতুন পোর্টফোলিওতে তখন সেগুলো আবারো কেনা হয়।

২০০৫ সালে নিউইয়র্ক সোসাইটি অব সিকিউরিটি এনালিস্টদের এক অনুষ্ঠানে গ্রিনব্লাটকে এক বছরের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জানান, দ্বিতীয় বছরে ধরে রাখলে পরিসংখ্যানগতভাবে কৌশলটির সাফল্য কমে যায়। এর কারণ সম্ভবত ভ্যালু শেয়ারগুলো খুব লম্বা সময় অবমূল্যায়িত থাকে না। রিলেটিভ ভ্যালুয়েশনে বিষয়টি বেশি প্রযোজ্য। যত বেশি মানুষ ভ্যালু ইনভেস্টমেন্টে বিশ্বাসী হবে, শেয়ার ধারণের এ চক্রটি তত ছোট করে আনতে হবে।

শেয়ার বিক্রি
‘এ বাজারে শেয়ার বিক্রি একটি শিল্পকলা, যা আমরা এখনো শিখিনি। এ কারণে আমরা ইনট্রিনজিক ভ্যালুতে শেয়ার বেচে দিই।’ শহরের সবচেয়ে বড় সিকিউরিটিজ বিশ্লেষকদের সামনে কথাটি হয়তো রসিকতা করেই বলেছিলেন গ্রিনব্লাট। হয়তো কিছুটা বিনয়ও ছিল। আবার হয়তোবা সত্যিও। কারণ এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে, যেখানে তারা বিক্রি করে দেয়ার পর ছয় মাসেই শেয়ারটির দর দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এটা শোনার পর আমাদেরই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোয়ান্ট গ্রিনব্লাট তার ফর্মুলার আক্ষরিক প্রয়োগে অবিচল। এজন্যই হয়তো গথাম ক্যাপিটালের পোর্টফোলিও প্রতি বছর ২০০৬ সাল পর্যন্ত ২১ বছরে গড়ে ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

ম্যাজিক ফর্মুলার হাইপোথেটিক্যাল রিটার্ন

  • ১৯৮৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে ম্যাজিক ফর্মুলার ব্যাকটেস্টেড বার্ষিক রিটার্ন ছিল ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ
  • সর্বোচ্চ মূলধনি ১ হাজার কোম্পানির ক্ষেত্রে এ রিটার্ন ২২ দশমিক ৯ শতাংশ
  • ম্যাজিক ফর্মুলা ৯৬ শতাংশ সময় বাজারের চেয়ে বেশি রিটার্ন দিয়েছে
  • সস্তায় কেনা শেয়ারের পোর্টফোলিওর ভলাটিলিটি তুলনামূলক কম ছিল

ম্যাজিক ফর্মুলার দুর্বলতা প্রসঙ্গে গ্রিনব্লাট
দীর্ঘমেয়াদি রিটার্ন আমলে নিয়ে বার্ষিক গড় ভালো দেখা গেছে মানে এই নয় যে, গ্রিনব্লাটের পোর্টফোলিও কোনো বছর ভোগেনি। সার্বিকভাবে বাজার নিম্নমুখী থাকলে কোনো কোনো বছর তাকে হতাশও হতে হয়। তবে প্রতিকূল সময়ও দেখা গেছে, কম দামে গ্রিনব্লাটের কেনা ভালো শেয়ারগুলোর প্রতি বাজারের একটি আকর্ষণ রয়ে গেছে। ভ্যালু বিষয়টিই এমন।

তার পরও খারাপ সময় যায়। তখন হয়তো ঠিক উল্টো দর্শনের একদল ওয়ালস্ট্রিটার মুনাফা গুনছে। গ্রিনব্লাটের বক্তব্য, ম্যাজিক ফর্মুলা সব সময় একই হারে সাফল্য দেখাবে, এমনটি আমিও আশা করি না। তাহলে সবাই এ ফর্মুলা ব্যবহার করত। আর সবাই এ ফর্মুলা ব্যবহার করলে কৌশলটির কার্যকারিতা আরো কমবে। বাজার তখন মুনাফা করার নতুন কোনো কৌশল নিয়ে মাতবে। তবে ভ্যালু ভ্যালুই থেকে যাবে।


সৌজন্যেঃ হাসান শাহারিয়ার

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.