Contrarian Investment Strategies:
কোন প্রকার
পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ২০০৭ সালে এক জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে শেয়ার বাজারে আমার যাত্রা শুরু। মাত্র ত্রিশ
হাজার টাকায় একটি ব্যাংক শেয়ার কিনেছিলাম বন্ধুর উপদেশ মত। প্রথম ২/৩ দিন দাম
বাড়লেও এর পরেই ক্রমাগত দাম হারাতে থাকে শেয়ারটি। দাম যত কমে আমার হতাশা তত বাড়ে
অথচ ঐ সময়ে বাজারের অন্যান্য ব্যাংক শেয়ারগুলো দিন দিন বাড়ছিল। হতাশ হলেও হাল
ছাড়িনি। নিজের মন্দ ভাগ্যকে দোষারোপ না করে, কেন দাম এ ভাবে কমছে তার কারন
অনুসন্ধানে মগ্ন হলাম।
অনলাইনে
২/৪ দিন খোজাখুজি করেই কারন বুঝতে পারলাম, শেয়ার মার্কেটের অ-আ-ক-খ কিছুই আমি জানি
না। দেশীয় পত্র-পত্রিকার অর্থনীতি পাতা পড়ে কিছু জানা সম্ভব হলেও বিস্তারিত
ব্যাখ্যা পাওয়ায় অসম্ভব। অনেক খোঁজ করেও শেয়ার মার্কেট সম্পর্কিত কোন ভাল মানের
বাংলা বই-পুস্তক পাইনি। কোন উপায় না দেখে অবশেষে ইংরেজী বইগুলই ধীরে ধীরে পড়া শুরু
করি।
আমার
গুটি কতক শখের একটি হল বই পড়া, যা এখনও আমি যথেষ্ট উপভোগ করি। সময় সল্পতায়
গল্প-উপন্যাস পড়ার সংখ্যা কমে গেলেও বিনিয়োগ সংক্রান্ত পড়াশোনা কষ্টকর হলেও চালিয়ে
যাচ্ছি। নতুন নতুন বই পড়ে শেখা টেকনিকগুল যখন শেয়ার ব্যবসায় মুনাফা বৃদ্ধিতে কাজে
লাগে, তখন পড়ার কষ্টটুকু স্বার্থক মনে হয়। ২০০৭ থেকে ২০১৫ এই আট বছরেও অবস্থার খুব
একটা পরিবর্তন হয়নি, বাংলায় ভাল মানের ষ্টক মার্কেট সম্পর্কিত বই এখনও সোনার হরিণ।
ইংরেজী বই আর অনলাইন আর্টিক্যাল-ই তাই ভরসা।
ষ্টক
মার্কেট নিয়ে সর্বশেষ যে বইটি পড়েছি তার নাম ‘Contrarian Investment Strategies: The Next
Generation’ । David
Dreman রচিত বইটিতে মূলত বিনিয়োগকারীদের
জটিল সব মনস্তত্ব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কোম্পানির আর্থিক সামর্থ ও দেশের সার্বিক
অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা ও শেয়ার বাজারের
গতিপথ নির্ধারনে উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তাই সাধারন বিনিয়োগকারীদের মনস্তত্ব (Investor’s behavior) বুঝতে পারলে, তাদের সবলতা-দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে শেয়ার
মার্কেট থেকে আশানরূপ মুনাফা অর্জন সম্ভব।
বাজারের
ঝোক যেদিকে তার বিপরীতে গিয়ে তথা হুজুগে বিনিয়োগকারীগন যে শেয়ারগুল নিয়ে মেতে আছে
তার বিপরীতে থাকা তুলনামূলক অপরিচিত/ সল্প পরিচিত অথচ ভাল ফান্ডামেন্টাল সম্পন্ন
শেয়ার বাছাই করে বিনিয়োগ করার পদ্ধতিই ‘Contrarian
Investment Strategy’ নামে পরিচিত। প্রথম
দিকে বেশ অবাক হয়েছি কারন, প্রায় সব মার্কেট বোদ্ধা সব সময় মার্কেট ট্রেন্ড মেনে
চলতে বলেন, অথচ লেখক বলছেন মার্কেট ট্রেন্ডেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার বিপরীতে
গিয়ে বিনিয়োগ পরিকল্পনা সাজাতে। ১৯২৯ থেকে ১৯৯১ এই ধীর্ঘ সময়ের আমেরিকান ষ্টক
মার্কেটের তথ্য বিশ্লেষণ করে লেখক তার তত্ত্ব প্রমান করেছেন। এই সময়ে মার্কেটের
জননন্দিত শেয়ারগুলর (Market favorable
stocks) চাইতে তুলনামূলক অপরিচিত/ সল্প পরিচিত শেয়ারগুল (Unfavorable stocks) ধীর্ঘ মেয়াদে অধিক মুনাফা প্রদান করেছে, যা বেশ চমকপ্রদ
তথ্য।
বাজারের জনপ্রিয় স্টকগুল সাধারণত
তাদের ফান্ডামেন্টালের তুলনায় অধিক মূল্যে লেনদেন হয়ে থাকে। কারন আর কিছুই নয়
মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা ও উচ্চাশা। পক্ষান্তরে সল্প পরিচিত স্টকগুলর চাহিদা কম থাকায়
দামও থাকে হাতের নাগালে। তাই কম মূল্যে ভাল ফান্ডামেন্টাল সম্পন্ন অথচ অপরিচিত/ সল্প পরিচিত শেয়ারগুল কেনা
অনেক সহজ। অপর দিকে ভাল ফান্ডামেন্টাল এবং জনপ্রিয়
এমন স্টকগুল কম দামে পাওয়া এক কথায় অসম্ভব।
বাজারে চাহিদা আছে এমন স্টকগুলর ক্ষেত্রে খারপ/ভাল নিউজে (মূল্য সংবেদনশীল তথ্য) বিপরীত ধর্মী প্রতিকৃয়া হয়। অদূর ভবিষ্যতে ভাল ব্যবসায়িক সম্ভবনা আছে এমন আগাম তথ্য/ প্রত্যাশা থেকেই কোন একটি ষ্টক জনপ্রিয় হয়। মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা মত না হলে বা খারাপ নিউজ আসলে জনপ্রিয় স্টকগুলর যতটা মূল্য পতন হয়; ভাল নিউজে দাম ততটা বাড়ে না। করন ভাল কোম্পানি ভাল ব্যবসা করবে এটাই প্রত্যাশিত। এই শেয়ারগুল যেহেতু অনেক বেশি বিনিয়োগকারী ধারন করেন সেহেতু খারাপ নিউজ অনেক বেশি মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত (Panicked)করে তোলে এবং অতি প্রতিক্রিয়াশীলতার কারনে ব্যপক মূল্য পতন হয়।
ঠিক
বিপরীত অবস্থা হয় তুলনামূলক অপরিচিত/ সল্প পরিচিত শেয়ারগুলর ক্ষেত্রে। এই শেয়ারগুল
নিয়ে বিনিয়োগকারীদের তেমন কোন প্রত্যাশাই থাকে না। বাজারে এই শেয়ারগুলোর খারাপ
নিউজ আসলে প্রতিক্রিয়া হয় মৃদু। কম দামে
থাকা শেয়ারগুলর দাম নতুন
করে আর খুব একটা কমে না। কিন্তু যদি স্টকগুলোর কোন ভাল নিউজ বাজারে আসে তবে তার প্রতিক্রিয়া হয় ব্যপক, অল্প দিনেই দাম অনেকটা বেড়ে যায়। কারন বাজারে
শেয়ারটির নতুন চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় এই মূল্য উতত্থান।
অতএব, তুলনামূলক ভাবে কম জনপ্রিয়
অথচ ভাল ফান্ডামেন্টাল থাকা স্টকগুল কম মূল্যে কিনে ধীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করলে
অদূর ভবিষ্যতে আশাতিত মুনাফা অর্জন সম্ভব। ফান্ডামেন্টাল ভাল থাকায় এদের ব্যবসা এক
সময় ভাল হবে। আর এই নিউজ আগে পরে যখনই মার্কেটে আসবে তখনই এর মূল্যস্তর নিশ্চিত
ভাবে বাড়বে। প্রত্যাশিত দাম পেলে বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিন। পোর্টফলিওতে খালি
হওয়া স্থানটি ঐ রূপ কম জনপ্রিয় নতুন কোন কোম্পানির ষ্টক বাছাই করে পূর্ণ করে নিন।
কম জনপ্রিয় কিন্তু ভাল ফান্ডামেন্টালের ষ্টক চারটি রেশিও দেখে চেনা সম্ভবঃ
- Low Price to Earning (P/E).
- Low Price to Cash Flow (P/CF).
- Low Price to Book Value (P/NAV).
- High Yield (Dividend/P) [Yield higher then Market Average.]
David Dreman তাঁর বইতে মোট ৪১টি Contrarian Rule বর্নণা করেছেন। প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠায় বিবৃত সবগুল রুল একটি লেখায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। তাই আমার কাছে গুরুতবপূর্ণ মনে হয়েছে এমন রুলগুলোই সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করছি-
টেকনিক্যাল এনালাইসিস বা মার্কেট টাইমিং নির্ভর কোন এনালাইসিস অনুসরণ না করাই শ্রেয়। এগুলো সাফল্যের চাইতে আপনার ব্যার্থতার পাল্লাই ভারী করবে।
এনালিস্টদের দেয়া প্রেডিকশনে ভরসা না করাই ভাল। ভাল মানের অনেক তথ্য থাকা সত্যেও সঠিক ঊপায়ে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা না থাকায় সেগুলকে মুনাফা অর্জনে কাজে লাগানো সম্ভব হয় না। প্রফেশনাল এই সব এনালিস্টদের মাত্র ২৯ ভাগ মার্কেটকে ঠিক ভাবে পড়তে পারে।
সব এনালিস্টই সর্বোচ্চ উচ্চাশা নিয়ে ষ্টক সম্পর্কিত পূর্বাভাস দেয়। তাই এগুলোকে বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করা উচিত।
চুলচেড়া হিসেব নির্ভর এনালাইসিস পরিত্যেগ করুন। কারন সুক্ষ পরিমাণ ভুল ও বিরুপ ফলাফল প্রদান করতে পারে।
এখনকার সদা পরিবর্তনশীল অর্থনীতিতে অতীতের তথ্য দিয়ে ভবিষ্যত অনুমান করতে যাওয়া অলিক প্রত্যাশা।
বাস্তবতার জমিনে পা রেখে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করুন। মানুষ তার স্বভাবগত কারনেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। সব চেয়ে খারাপ কী ঘটতে পারে তা নিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করুন।
বাজারে যখন কোন ষ্টক নিয়ে প্রবোল উচ্চাশা সৃষ্টি হয় তখন এর সুযোগ নিন। কারন এই সময়ে ভাল মানের অন্য শেয়ার কম দামে কেনা যায়।
ভাল/ খারাপ নিউজ বাজারে ধীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব ফেলে। খারাপ নিউজ যেমন জনপ্রিয় স্টকের মূল্যে বড় পতন ঘটায় তেমনি ভাল নিউজ সল্প পরিচিত স্টকের মূল্যে বড় উস্ফালন ঘটায়।
যখন কোন স্টকের Contrarian Indicator গুল বাজার গড়ের সম
পর্যায়ে চলে আসবে তখন এটি বেঁচে দিন এবং নতুন কোন Contrarian স্টকে বিনিয়োগ করুন।
Courtesy By: Hasan Shaharear
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.